‘আব্বুর জন্য সবাই দোয়া করুন’


‘প্লিজ, আব্বুর জন্য সবাই দোয়া করুন। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য আব্বু থাইল্যান্ড যাচ্ছেন। এতটা জার্নি করার মতো অবস্থা আব্বুর নেই। তারপরও উন্নত চিকিৎসার জন্য আব্বু সেখানে যাচ্ছেন।’ বললেন সংগীতশিল্পী আলিফ আলাউদ্দীন, আলাউদ্দীন আলীর মেয়ে।

দেশের বরেণ্য গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক ও বাদ্যযন্ত্রশিল্পী আলাউদ্দীন আলীর শরীরে আবার ক্যানসার ধরা পড়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর ফুসফুসে নতুন করে টিউমারের অস্তিত্ব দেখা গেছে। পাশাপাশি তাঁর যকৃতেও টিউমার পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমেই অবনতি হচ্ছে।

আলাউদ্দীন আলীর স্ত্রী ফারজানা মিমি আজ বৃহস্পতিবার সকালে জানালেন, তাঁরা থাইল্যান্ডের ভিসা পেয়ে গেছেন। আগামী শনিবার আলাউদ্দীন আলীকে নিয়ে তিনি থাইল্যান্ডে যাবেন। থাইল্যান্ডের স্যামিটিভেজ সুকুমভিত হাসপাতাল ও ব্যাংকক হাসপাতালে তাঁর সর্বশেষ পরীক্ষার সব রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। এসব রিপোর্ট দেখে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আলাউদ্দীন আলীকে দ্রুত সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

আলিফ আলাউদ্দীন আরও বললেন, ‘এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের অনেক শিল্পী ও প্রতিষ্ঠান সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আব্বুর পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’


বর্তমান আর্থিক অবস্থা প্রসঙ্গে ফারজানা মিমি জানিয়েছিলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি আলাউদ্দীন আলীর চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্থিক অনুদান হিসেবে ২৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া চ্যানেল আই দিয়েছে ১ লাখ টাকা, শিল্পীর পাশে ফাউন্ডেশন দিয়েছে ৩ লাখ টাকা আর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় দিয়েছে ৩ লাখ টাকা। গত ২২ জানুয়ারি থেকে ৭৭ দিন রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাউদ্দীন আলী ভর্তি ছিলেন। দীর্ঘদিন তাঁকে হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) রাখা হয়। হাসপাতালের বিল বাবদ খরচ হয়েছে ১৬ লাখ টাকা। এরপর তিনি সাড়ে চার মাস সিআরপিতে ছিলেন। সেখানেও অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন হাতে আছে ৮ লাখ টাকা।

তবে আজ তিনি জানালেন, এ ছাড়াও পারটেক্স গ্রুপ থেকেও তখন ৫ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরও ২ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। ছেলেমেয়ে আর আত্মীয়স্বজনও আলাউদ্দীন আলীর পাশে আছেন।

এর আগে ফারজানা মিমি বলেছিলেন, ‘এখন হাতে যে টাকা আছে, তা দিয়ে আলাউদ্দীন আলীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা মোটেও সম্ভব না। আমরা বিভিন্ন শিল্পী ও প্রতিষ্ঠানের কাছে আর্থিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করেছি। এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সহযোগিতা বা আশ্বাস পাইনি। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবার আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছি।’

গত ২২ জানুয়ারি রাতে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন আলাউদ্দীন আলী। তখন তাঁর খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারছিলেন না। পাশাপাশি তাঁর উচ্চমাত্রায় জ্বর ছিল। কাশ হচ্ছিল। সবকিছু মিলিয়ে অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে তাঁকে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ২৫ জানুয়ারি সকালে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। ৭৭ দিন চিকিৎসার পর তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়। গত ৮ এপ্রিল তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। এরপর তাঁকে ফিজিওথেরাপি নেওয়ার জন্য মিরপুরে সিআরপিতে ভর্তি করা হয়।


এর আগে ২০১৫ সালের ৩ জুলাই আলাউদ্দীন আলীকে ব্যাংকক নেওয়া হয়েছিল। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায়, তাঁর ফুসফুসে একটি টিউমার রয়েছে। তখন আলাউদ্দীন আলী প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, টিউমারটি হৃদ্‌যন্ত্রের কাছাকাছি হওয়ায় এর অস্ত্রোপচার বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তবে বিকল্প হিসেবে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা হয়। এরপর এখন পর্যন্ত তাঁর অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসাও চলছিল।
Powered by Blogger.