রাখাইনকে বাংলাদেশের অংশ করলেই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান

Watch Video


রাখাইনকে বাংলাদেশের অংশ করলেই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে’ কংগ্রেসম্যান ব্র্যাড শারমেন মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির এশিয়া সম্পর্কিত উপ-কমিটিতে  ‘দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এবং অর্থ বছর ২০২০ বাজেট সম্পর্কিত শুনানিতে এই উপ-কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান (ডেমক্র্যাট- ক্যালিফোর্নিায়া) ব্র্যাড শারমেন (Brad Sherman) বলেছেন, ‘লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দেওয়ায় আমি বাংলাদেশকে অভিবাদন জানাচ্ছি।

আমি কংগ্রেসের এই কক্ষে এর আগেও বলেছি, এখনও বলতে চাই, মিয়ানমার অথবা বার্মা সরকার যদি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রক্ষায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী না হয়, রাখাইন স্টেটের উত্তরাঞ্চলের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজনকে নিরাপত্তা দিতে না চায় অথবা অপারগ হয় তাহলে ওই স্টেটের (প্রদেশের) রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত এবং ওই এলাকাকে বাংলাদেশের কাছে স্থানান্তর করতে (বাংলাদেশের অংশ করতে) যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেওয়া উচিত, যা ওই এলাকার মানুষও চাচ্ছে। ’

উপ-কমিটির চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন, ‘রোহিঙ্গারা এমন একটি সরকারের অধীনে থাকতে চায়, যারা তাদেরকে নিধন নয়, সুরক্ষায় আন্তরিক অর্থে কাজ করবে। ’

শারমেনের বক্তব্যের পর মন্ত্রণালয়ে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী এ্যাম্বাসেডর এ্যালিস ওয়েলস এবং ইউএস এইডের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রশাসক গ্লোরিয়া স্টিলি নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

তবে তারা উপরোক্ত আলোকে কোন মতামত ব্যক্ত করেননি। ব্র্যাড শারমেনের এমন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাহফুজ আর চৌধুরী বলেছেন, ‘এ প্রস্তাবের হান্ড্রেড পার্সেন্ট সমর্থন জানাতে চাই। এর বাইরে অন্য কিছুতেই রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে না।

কারণ, মিয়ানমার প্রশাসনের মধ্যে গণতান্ত্রিক উদারতা একেবারেই ছিল না। ’ ‘তবে এমন প্রস্তাবেও সম্মতি লাগবে চীনের। চীন ছাড়া সম্ভব নয়’-উল্লেখ করেন এই রাষ্ট্র বিজ্ঞানী। এজন্যে বিশ্বজনমত তৈরি করতে হবে, চীনকে এ বাপারে রাজি করতে। নিউইয়র্ক সফররত ঢাকার অঙ্কুর প্রকাশন’র পরিচালক মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ প্রস্তাবের যুক্তি থাকলেও বাস্তবতা নেই।

একটি অঞ্চলকে স্বাধীন করা যতটা সহজ, অন্য দেশের সঙ্গে একিভূত করা ততটাই কঠিন। এর আগে মালয়েশিয়া থেকে ছোট্ট একটি দ্বীপ সিঙ্গাপুরও স্বাধীন হয়েছে। রাখাইনের মুসলিম সম্প্রদায় সব সময়ই অবহেলিত, উপেক্ষিত মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায় কর্তৃক। তাই তাদেরকে ঘুরে দাঁড়াতে চাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অকুন্ঠ সমর্থন। ’

জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টে ডেমক্র্যাট সিনেটর বাংলাদেশি আমেরিকান শেখ রহমান বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। এজন্য যা করলে ভালো হয় সেখানেই আমার সমর্থন থাকবে। কংগ্রেসম্যান ব্র্যাড শারমেনের প্রস্তাবেও আমি একমত। এক্ষেত্রেও মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে বাধ্য করতে জনমত তৈরি করতে হবে। ’

আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর খোঁজ-খবর রাখেন এমন প্রবাসীরা বলেছেন, এর আগে ১৯৭৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসন কর্তৃক পূর্ব তিমুরে গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে ওই এলাকা একটি স্বাধীন ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। এরপর একইভাবে দক্ষিণ সুদানের উৎপত্তি ঘটেছে।

রাখাইন এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় মোটেও আগ্রহী নয় মিয়ানমারের বুদ্ধ-প্রশাসন, তাই তাদেরকে স্বাধীন একটি ভূখণ্ডের অধিবাসী হবার ক্ষেত্রে প্রস্তুত অথবা ওই এলাকাকে বাংলাদেশের অংশে পরিণত করাই শ্রেয়। তাহলেই রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণভাবে জীবন-যাপনে সক্ষম হবে।

কংগ্রেসম্যানের এমন প্রস্তাব নিয়ে আমেরিকায় প্রবাসীরাও সরব। অধিকাংশরাই চাচ্ছেন রাখাইনের স্বাধীনতা। খুব কমসংখ্যক বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইনকে যুক্ত করার পক্ষে। তবে প্রায় সকলেই আশা করছেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বসতভিটায় ফিরে সম্মানের সঙ্গে বসতি শুরু করতে সক্ষম হয়-এমন পরিবেশ তৈরি হোক।

এদিকে, প্রতিনিধি পরিষদে পররাষ্ট্র সম্পর্কিত মূল কমিটির চেয়ারম্যান নিউইয়র্কের কংগ্রেসম্যান এলিয়ট এঙ্গেল (ডেমক্র্যাট) এবং এ কমিটিতে রিপাবলিকান (ওহাইয়ো) কংগ্রেসম্যান স্টিভ স্যাবট যৌথভাবে ২০ জুন আরেকটি বিল উত্থাপন করেছেন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের দাবিতে।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়েছে এই বিলে। এটি পাশ হলে মিয়ানমারের প্রশাসনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, মিয়ানমার ভ্রমণ এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের ওপর কঠোর শর্ত আরোপিত হবে। আর এর ভিকটিম হবে মিয়ানমারের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিক, প্রশাসক, সেনা কর্মকর্তারাও।

এ প্রসঙ্গে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে এ কমিটির চেয়ারম্যান এলিয়ট এঙ্গেল বলেছেন, ২০১৭ সালে বার্মার সামরিক বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা নিধনের যে বর্বরতা শুরু হয়েছে, তার বিচারের জন্যে আরও কিছুদিন অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। সহিংসতা থেকে রোহিঙ্গাদের মুক্তি পাওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে এবং যারা এহেন মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে দায়ী, সোজা কথায় রোহিঙ্গাদের গণহত্যার জন্যে দায়ী তাদেরও কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর সময় হয়েছে। ’

শিগিগিরই এটি প্রতিনিধি পরিষদে পাশ হলেও উচ্চকক্ষ সিনেটে পাশের কোনই সম্ভাবনা নেই বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। কারণ, সিনেট কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান সিনেটর (কেন্টাকি) মিচ ম্যাককনেল হচ্ছেন অং সান সু চি’র ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
Powered by Blogger.